ব্যারোমিটার দিয়ে বহুতল ভবনের উচ্চতা নির্ণয় ... (!!)

কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান পরীক্ষায় একজন পরীক্ষক নীচের প্রশ্নটি করেছিলেন-

"একটি ব্যারোমিটারের সাহায্যে কিভাবে একটি বহুতল ভবনের উচ্চতা নির্ণয় করা যায় বর্ণনা কর।"

একজন ছাত্র লিখলো-

"প্রথমে ব্যারোমিটারের মাথায় একটা সুতা বাধতে হবে। এরপর ব্যারোমিটারটিকে ভবনের ছাদ থেকে নীচে নামিয়ে মাটি পর্যন্ত নিতে হবে। তাহলে ব্যারোমিটারের দৈঘ্য আর সুতার দৈঘ্য যোগ করলেই ভবনের উচ্চতা পাওয়া যাবে।"
 
এরকম উত্তর দেয়ায় পরীক্ষক বিরক্ত হলেন, এবং তিনি ছাত্রটিকে ফেল করিয়ে দিলেন।

এরপর ছাত্রটি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে আবেদন করল যে তার উত্তরটি সম্পূর্ণ ঠিক ছিল, তখন বিশ্ববিদ্যালয় একজন নিরপেক্ষ শিক্ষককে বিচারক হিসাবে নিয়োজিত করলেন ব্যাপারটা মীমাংসা করার জন্য।

বিচারক দেখলেন, ছাত্রটির উত্তর আসলেই ঠিক, কিন্তু পদার্থবিজ্ঞানের কোন বিচার-বিশ্লেষন ছাত্রটির উত্তরের মাঝে নাই ।

তাই তিনি ঠিক করলেন, ছাত্রটিকে ডাকবেন এবং তাকে ছয় মিনিট সময় দিবেন, এসময়ের মধ্যে ছাত্রটিকে মৌখিকভাবে প্রশ্নটির এমন উত্তর দিতে হবে যার সাথে পদার্থবিজ্ঞানের প্রাথমিক সূত্রগুলির সাথে নূন্যতম সম্পর্ক আছে।

ছাত্রটি এসে চুপচাপ কপাল কুচকে চিন্তা করা শুরু করলো। পাঁচ মিনিট কেটে গেল, তবুও সে উত্তর দিলনা।  বিচারক তাকে সতর্ক করে দিলেন যে তার সময় প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। ছাত্রটি বলল, তার কাছে কয়েকটি যথাযোগ্য উত্তর আছে, কিন্তু সে ঠিক করতে পারছে না যে কোনটা সে বলবে। বিচারক তাকে তাড়াতাড়ি করতে বললে ছাত্রটি যে উত্তরগুলি দিলঃ

"প্রথমত আপনি ব্যারোমিটারটা নিয়ে ছাদে উঠবেন, এরপর ছাদের উপর থেকে ব্যারোমিটারটা ছেড়ে দিবেন এবং হিসাব করবেন মাটিতে পড়তে ব্যারোমিটারটির কতটুকু সময় লাগল। এরপর  সূত্রটির সাহায্যে আপনি ভবনের উচ্চতা মেপে ফেলতে পারবেন। কিন্তু ব্যারোমিটারটা ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে।"

"অথবা যদি রোদ থাকে তাহলে ব্যারোমিটারটার দৈঘ্য মাপবেন। এরপর ব্যারোমিটারটাকে দাড়া করিয়ে এর ছায়ার দৈঘ্য মাপবেন। এরপর ভবনের ছায়ার দৈঘ্য মাপবেন। এবং এরপর অনুপাতের ধারণা ব্যবহার করে কিছুটা হিসাব কষলেই ভবনের উচ্চতা পেয়ে যাবেন।"




"কিন্তু আপনি যদি পুরোপুরিভাবে বিজ্ঞানকে ব্যবহার করে উচ্চতা জানতে চান তাহলে আপনি ব্যারোমিটারের মাথায় ছোট একটা সুতা বেধে প্রথমে মাটিতে এরপরে ভবনের ছাদে পেন্ডুলামের মত দোলাবেন এবং অভিকর্ষ বলের সংরক্ষণশীলতার কারনে সূত্র থেকে ভবনের উচ্চতা বের করতে পারবেন।"

"অথবা ভবনটির যদি কোন বহিঃস্থ জরুরী নির্গমন সিড়ি থাকে তাহলে আপনি সেখানে গিয়ে ব্যারোমিটারের দৈঘ্য অনুযায়ী ব্যারোমিটার দিয়ে মেপে মেপে ভবনের উচ্চতা বের করে ফেলতে পারেন।"
"আর আপনি যদি একান্তই সাধারণ ও সহজসরলভাবে উচ্চতা বের করতে চান তাহলে, প্রথমে ব্যারোমিটারটা দিয়ে ছাদের উপর বায়ুচাপ এবং এরপর মাটিতে বায়ুচাপ মাপবেন। এরপর বায়ুচাপের পার্থক্যকে মিলিবার থেকে ফিটে পরিনত করলেই ভবনের উচ্চতা পেয়ে যাবেন।" 

পদার্থবিজ্ঞানে আমাদেরকে সবসময় হিসাব-নিকেশের মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করতে বলা হয়, কিন্তু আমার মতে সবচেয়ে ভাল পদ্ধতি হবে ভবনের রক্ষণাবেক্ষনের দায়িত্বপালনকারীর কাছে যাওয়া এবং তাকে বলা, "যদি আপনি আমাকে এই বহুতল ভবনটির উচ্চতা বলে দেন, তাহলে আপনাকে আমি এই সুন্দর ব্যারোমিটারটি উপহার হিসাবে দেবো। " 

এই ছাত্রটি ছিল পদার্থবিজ্ঞানের নোবেল পুরষ্কারজয়ী প্রথম ডেনিশ বিজ্ঞানী, নীলস বোর